হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, শিয়া ফকিহদের—শেখ তুসি থেকে আল্লামা হিল্লি ও সাহিবে জাওয়াহের পর্যন্ত—বিবিধ মতামত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, যদিও অধিকাংশ ফকিহ দশ বছরের বেশি সময়ের শান্তি চুক্তিকে দুর্বল অবস্থার মুসলমানদের জন্য অগ্রহণযোগ্য মনে করেন, তবু কিছু বরেণ্য ফকিহের মতানুসারে, যদি ইমামের পক্ষ থেকে “মসলাহত” (অর্থাৎ মুসলমানদের সর্বোচ্চ স্বার্থ) নিশ্চিত হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি বৈধ হতে পারে।
সর্বোচ্চ নেতা কি বলেছেন?
ইসলামী মানব বিজ্ঞানের সংস্থা "মিফতাহ"–এর বরাতে হওযা নিউজ জানায়, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা (আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী) তাঁর এক উচ্চতর ফিকহ পাঠে “হুদনা” বা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যা নিচে তুলে ধরা হলো:
মুসলমানরা দুর্বল হলে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি চুক্তি?
যদি মুসলমানরা বাস্তবিক অর্থেই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়, তাহলে এক বছরের বেশি সময়ের জন্য শান্তি চুক্তি করা যেতে পারে—এ নিয়ে ফকিহদের মধ্যে বিরোধ নেই। তবে “দুর্বলতা” মানে যদি শুধুমাত্র বাহ্যিক দুর্বলতা হয়, এবং মুসলমানদের “অপরিহার্যতা” (অর্থাৎ বিকল্পহীন বাধ্যতা) না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র দুর্বলতা যুদ্ধবিরতির বৈধতা দেয় না।
ফকিহদের মতামত:
শেখ তুসি তাঁর বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ আল-মাবসুত-এ বলেন: যদি ইমাম মুশরিকদের (অবিশ্বাসীদের) উপর বিজয়ী না হন, বরং শত্রু শক্তিশালী ও মুসলমানরা দুর্বল হয়, কিংবা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেক খরচসাপেক্ষ হয়, তাহলে ইমাম সর্বোচ্চ ১০ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে পারেন। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও হুদাইবিয়ার চুক্তিতে কুরাইশদের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য শান্তি চুক্তি করেছিলেন। পরে সেই চুক্তি তারাই ভঙ্গ করে।
আল্লামা হিল্লি তাঁর আল-কাওয়ায়েদ গ্রন্থে বলেন: যদি মুসলমানরা দুর্বল অবস্থায় থাকে এবং ইমাম দশ বছরের বেশি সময়ের জন্য চুক্তি করেন, তাহলে দশ বছরের অতিরিক্ত সময় বাতিল বলে গণ্য হবে।
এই মত ইবনে জুনাইদ-এর সাথেও সংযুক্ত।
সাহিবে জাওয়াহের সহ আরও অনেক ফকিহ আল্লামা হিল্লির এই মতকে সমর্থন করেছেন।
চুক্তির মেয়াদ কেন সীমিত?
যেহেতু রাসুল (সা.) কুরাইশদের সঙ্গে কেবল ১০ বছরের চুক্তি করেছিলেন, তাই অনেকে মনে করেন যে এর বেশি সময় বৈধ নয়। তবে আল্লামা হিল্লি বলেন, রাসুল (সা.) যাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন, তাঁরা কুরআনের “قاتلوا المشركین” আয়াতের আওতা থেকে বাহিরে, অর্থাৎ ব্যতিক্রম। তাই সাধারণ নিয়ম হিসেবে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা নির্ধারণে বাধ্যতা নেই—যদি মুসলমানদের স্বার্থ থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত:
সারসংক্ষেপে বলা যায়:
দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি (দশ বছরের বেশি) তখনই বৈধ, যখন ইমাম মুসলমানদের স্বার্থে তা জরুরি মনে করেন।
এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ছাড় নয়; বরং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মসলাহত-ভিত্তিক এক কৌশল।
মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের রক্ষা করা ও সময়মতো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসা।
উপসংহার:
ইসলামী ফিকহে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ নিয়ে সীমাবদ্ধতা থাকলেও, যদি প্রয়োজন ও মুসলিম স্বার্থে তা প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে ইমামের অনুমতিক্রমে দীর্ঘমেয়াদি হুদনা (যুদ্ধবিরতি) বৈধ। এটা শুধু দুর্বলতা নয়, বরং দূরদর্শিতার চিহ্ন—যা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ থেকেও সমর্থনযোগ্য।
আপনার কমেন্ট